রাতের আঁধারে পিছন থেকে আক্রমণ করে অত্যন্ত নৃশংস, কাপুরুষোচিতভাবে হত্যা করা হয় রাজীবকে। একদল বর্বর এই হত্যাকাণ্ডকে জায়েজ করার জন্য অপপ্রচার শুরু করেছে, রাজীব ইসলামকে কোথায় অপমান করেছে তা খুঁজে বের করার জন্য তাদের ঘুম আসছে না। একজন মানুষ হিসেবে তাদের এই অবস্থা দেখে আমি লজ্জিত এবং কারো মধ্যে মানবতা বলে কিছু থাকলে সে লজ্জিত হতে বাধ্য। তারা রাজীবকে হত্যা করতে ক্লান্ত নয়, তারা তার নামে লেখা ব্লগ প্রকাশ করছে যা তাদের সংবাদপত্রে কেউ কখনও অনুসন্ধান করেনি, গুরুত্বপূর্ণ মনে করেনি। ধর্মের বিরুদ্ধে লেখা ব্লগারদের তারা প্রতিনিয়ত হুমকি দিচ্ছে।
আমাদের দেশের অধিকাংশ নাস্তিকই ধর্মীয় পরিবারের সন্তান। নাস্তিকদের অনেক ক্ষেত্রেই ধর্মীয় পরিবার, সেইসাথে ধর্মীয় আত্মীয়স্বজন এবং বন্ধুবান্ধব থাকে। আমার নিজের একটা ধার্মিক পরিবার আছে, অনেক ধার্মিক বন্ধু আছে। আমি যত ধর্ম বিরোধী লেখাই লিখি না কেন, কোন ধর্মবিশ্বাসীর প্রতি কোনদিন বিদ্বেষ বোধ করিনি, কিন্তু বহুবার নিজের রক্ত দিয়ে ধর্মবিশ্বাসীদের বাঁচিয়েছি, বহুবার নিজ হাতে প্রার্থনা করতে দিয়েছি। আমি জানি যে ধর্মবিদ্বেষ এবং ধর্মবিদ্বেষ সম্পূর্ণ ভিন্ন জিনিস।
যদি একটি আদর্শ সমালোচনার জন্য উন্মুক্ত না হয় তবে তা ফ্যাসিবাদে পরিণত হয়। আবার ধরুন পারিবারিক-সামাজিক বা অন্যান্য কারণে আপনি একটি ভ্রান্ত মতবাদে বিশ্বাস করেন কিন্তু আপনার সমাজে এর সমালোচনা বা নিন্দা করা নিষিদ্ধ। তাহলে আপনি আপনার জীবনেও বুঝতে পারবেন না যে আপনি একটি ভ্রান্ত মতবাদ লালন করছেন। ধর্মান্ধ আস্তিকরা এমন কোন মতবাদে বিশ্বাস করে যা তাদের মানুষ হতে দেয় না, খুনিদের পার্থিব বানাবে? আমরা যখন দেখি বিশ্বাসীরা ‘যারা ইসলামের অবমাননা করে তাদের শিরশ্ছেদ করছে’, তখন আমরা ভাবি কেন ধরনী এখনও দ্বিধা করেননি।
কে বুঝবে মুমিনদের, ধর্ম এভাবে রক্ষা হয় না। এটা তরবারি নিয়ে ধর্ম রক্ষার যুগ নয়, তথ্যের অবাধ প্রবাহের এই যুগে ধর্মের সমস্যা কোথায় তা যে কেউ খুঁজে বের করতে পারবে। প্রায় সব নাস্তিকই ধর্মীয় পরিবার থেকে আসে। আমি ছোটবেলায় খুব ধার্মিক হয়ে বড় হয়েছি এবং ধর্মগ্রন্থ পড়ে ধর্ম ত্যাগ করেছি। রাজীবের বাবাও ছেলেকে ধর্মীয় শিক্ষা দেন। অর্থাৎ হত্যা করে নাস্তিকদের আগমন রোধ করা সম্পূর্ণ অসম্ভব। হুমায়ুন আজাদকে হত্যার হামলার মাধ্যমে কি নাস্তিকদের উত্থান বন্ধ হয়েছে? বরং মানুষ নাস্তিকতার প্রতি বেশি আগ্রহী হয়েছে এবং সচেতনভাবে এর দিকে এগিয়ে গেছে। রাজীব হত্যার পর তাদের অনুমতি না নিয়ে বিভিন্ন জামাত পত্রিকায় নাস্তিকদের বিভিন্ন লেখা ছাপা হচ্ছে, কিন্তু শেষ পর্যন্ত নাস্তিকদের সম্পর্কে মানুষ জানতে চায়, তারা তাদের লেখা বেশি হারে পড়ছে, মূল্যায়ন করছে। অনেক নাস্তিক ধর্ম নিয়ে বেশি কিছু লেখে না বা লিখতে পছন্দ করে না কারণ আবর্জনা নিয়ে লেখা প্রায়ই আবর্জনায় পরিণত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে, কিন্তু ধর্মান্ধদের ক্রমাগত উস্কানি তাদের লিখতে বাধ্য করবে।
সেই মিথ্যাটি ব্লগ, ফেসবুক গ্রুপের লাইন পেরিয়ে বহুদিনের বিলুপ্ত সংবাদ মাধ্যমে পৌঁছেছে। এখানে উদাহরণ হিসেবে নয়া রাজাকার মাহমুদুর এবং তাদের পোষা বুদ্ধিজীবীদের কথা বলতে পারি। জামায়াতের কিছু পত্রিকা যেমন আমার দেশ, নয়াদিগন্ত, ইনকিলাব ইত্যাদি দেখা যায়। 18 ফেব্রুয়ারি ‘আমার দেশ’ পত্রিকার খবর দেখুন,
“রাজীব ছাড়াও, শাহবাগ আন্দোলনের নেতৃত্বদানকারী বিপুল সংখ্যক ব্লগার দীর্ঘদিন ধরে অশ্লীল ভাষায় ইসলাম বিরোধী লেখালেখি করছেন। তাদের মধ্যে একজন হলেন ডঃ ইমরান এইচ সরকার, অমি রহমান পিয়াল, আরিফ জেবতিক, স্বঘোষিত নাস্তিক আসিফ। মহিউদ্দিন, কট্টর আওয়ামীপন্থী ব্লগার ইব্রাহিম খলিল (সাবাক) এবং অন্যরা”।
এখন বলুন, ইমরান, অমি বা আরিফ জেবতিক কখন ইসলাম বিরোধী লেখা লেখেন? আমি জেবতিক ভাইয়ের একটি নিবন্ধ পড়েছি যেখানে তিনি বরং ইসলাম বিরোধিতার জবাব দিয়েছেন। আর রাজীব শাহবাগ আন্দোলনের নেতৃত্ব দেন কবে? ইন্টারনেটের বাইরের সাধারণ মানুষ ব্লগ সম্পর্কে তেমন কিছু জানেন না, ব্লগাররাও ব্লগ করার সময় তাদের কথা মাথায় রাখেন না। তবে এ ধরনের কিছু সংবাদপত্র ধর্মবিরোধী লেখা প্রকাশ করে সাধারণ মানুষকে ক্ষুব্ধ করে, দেশে নৈরাজ্য সৃষ্টির চেষ্টা করছে এবং মিথ্যাচার করে অনেকের জীবন বিপন্ন করছে।
কেউ কেউ আছেন যারা মনে করেন নাস্তিকরা বসে থাকতে পারে কথা বলতে পারে না। কিন্তু প্রশ্ন হল, রাষ্ট্রধর্ম মাথার উপর ঝুলে থাকা অবস্থায় নাস্তিকরা কেন নির্বিকার বসে থাকবে, যেখানে তারা ধর্মের নামে সর্বদা অনৈতিক কাজ করতে দেখবে? ধর্মীয় নিপীড়নের অবসান ঘটলে, ধর্মবিরোধী লেখাগুলোর আবেদন শূন্যের কোঠায় নেমে আসবে, ফলে সেগুলো হ্রাস পেতে বাধ্য। ধর্মীয় নিপীড়ন বন্ধ করতে হলে আগে ধর্মীয় নিপীড়ন বন্ধ করতে হবে।
আমাদের পরিবর্তন করতে হবে। কেন আমরা পরিবর্তন ভয় পাই? ভয় থেকে মুক্তি দিতে হবে। আমরা মানুষ নিজেদের বেঁচে থাকার অধিকার দিয়েছি। আমরা কারো আদেশের দাস হওয়ার স্বপ্ন দেখি না। আমরা আমাদের মতো করে বাঁচব। আমরা জানি কিভাবে বাঁচতে হয়। আমাদের স্বপ্নকে উপলব্ধি করতে হবে। পরিবর্তনের সময় এসেছে। এই সমাজ ও মৌলবাদের অবসানের সময় এসেছে। আমি আমার পক্ষ থেকে এই প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখব। সাথে যারা আছেন তাদের ধন্যবাদ।
6 Responses
তোরে কাইটা কুচি কুচি না করা পর্যন্ত শান্তি নাই। দেশে আয় একবার শুধু।
খাঙ্কির বাচ্চা তুই আল্লাহকে নিয়ে গবেষনা করিস? তুই একটা অবিশ্বাসী, তুই কি ন্যাসঙ্গত ভাবে আল্লহাওকে বিশ্লেষন করবার যোগ্যতা রাখস? তুই এক পক্ষীয় একটা হারামী। ইবলিশ শয়তান
এইগুলা হোলো আপনার অজ্ঞতার কারনে বলা।
আসলে এই সময়ে র্যাশনাল চিন্তার কোন স্থানই মনে হয় নেই। সবাই কেমন জানি খুব উগ্র হয়ে যাচ্ছে
আপনার লেখা দারুণ
আসলে তোকে এসব দিয়ে হবে না। তোকে কেটে টুকরো টুকরো করে নদীতে ভাসাতে হবে। তাহলেই সব কিছু ঠিক হয়ে যাবে